মেহেরপুর ৭১, ১৩ অক্টোবর:
অরণি’র অনুপ্রেরক শব্দসৈনিক প্রসেনজিৎ বোস বাবুয়ার ষষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী আজ। বৈশিক করোনা মহামারির কারণে অরণি থিয়েটারের কোন আয়োজন না থাকায় সংগঠনের পক্ষ থেকে ক্ষমা চেয়ে নিয়ে স্মরণ করতে চাই স্বাধীন বাংলা বেতারের শব্দসৈনিক প্রসেনজিৎ বোস বাবুয়া কাকাকে। কাকার খুব আশেপাশে থেকে শিশুকাল থেকে বড় হয়েছি। বোস প্রাঙ্গণে খেলার সুবাদে প্রায়ই কাকার সাথে দাবা খেলার সুযোগ হতো। পরেতো ১৯৯৪ সালে বোস প্রাঙ্গণের দেবদারু গাছের তলায় অরণি’র জন্ম হলো। আর তখন থেকেই অরণি’র অভিভাবক ছিলেন বাবুয়া কাকা। খুব ভালোবাসতেন অরণি’র সভাপতি নিশান সাবের সহ সকলকে তাই অভিভাবক হিসাবে ঢাকায় বাংলাদেশ টেলিভিশনে অরণি’র ‘পোড়বাড়ি’ নাটকের সময়ও সাথে ছিলেন কাকা। কাকা ভুলিনায় ভুলবোনা আপনাকে। শান্তিতে থাকবেন। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের অন্যতম শব্দসৈনিক ও মুক্তিযোদ্ধা এবং সমাজসেবক প্রসেনজিৎ বোস বাবুয়া ১৯৪৫ সালের ১০ অক্টোবর এ অঞ্চলের জমিদার বোস পরিবারের বসু ভিলায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবার নাম হিরণ কুমার বোস ও মাতা অলোকা বোস। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেলে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় (২০১৪ সালের শুরু থেকে ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত) গনজাগরণ সৃষ্টিকারী প্রসেনজিৎ বোস বাবুয়া ২০১৪ সালের ১৩ অক্টোবর মেহেরপুর বোসপাড়ায় নিজ বাড়ি বসু ভিলায় রবিবার দিবাগত রাত সাড়ে ৩ টার দিকে তিনি ইহলোক ত্যাগ করেন। পরের দিন সোমবার সকাল সাড়ে ১০টায় মেহেরপুর শহীদ ড. সামসুজ্জোহা নগর উদ্যানে প্রসেনজিৎ বোস বাবুয়াকে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়। পরে সকাল ১১টায় ড. সামসুজ্জোহা নগর উদ্যান থেকে শেষকৃত্যের জন্য বামনপাড়া শ্মশানে নিয়ে যাওয়া হয়। আজন্ম অসাম্প্রদায়িক ও প্রগতিশীল ভাবনার এই মানুষটি শিক্ষাগুরু শিবনারায়ণ চক্রবর্তীর কাছে অভিনয়ে হাতেখড়ি নিয়ে সাংস্কৃতিক অঙ্গনে প্রবেশ করেন। সার্বক্ষনিক একত্রে থাকতেন বঙ্গবন্ধুর প্রেস সচিব আমিনুল হক বাদশা, কলামিস্ট গাফ্ফার চৌধুরী, ইসমাইল হোসেন, ছহিউদ্দিন মিয়া প্রমূখ। ১৯৭১ সালে তিনি মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। রণাঙ্গনের সৈনিকদের উৎসাহ দিতে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সাথে যুক্ত হন তিনি। তৎকালীন এসডিপিও তৌফিক এলাহী সহ কল্যাণী ক্যাম্পে থাকাকালীন নিজেদের পৈত্রিক জমি বিক্রি করে মুক্তিফৌজদের সহযোগিতা করেন এবং প্রখ্যাত নাট্যকার কল্যাণ মিত্রের আমন্ত্রণে তার লেখা ‘জল্লাদের দরবারে’ নাটকে অভিনেতা সৈয়দ হাসান ইমাম, আনোয়ারা হোসেন, রাজু আহম্মেদ, আজমল হুদা মিঠু, সুমিতা দেবীসহ অনেক গুণী শিল্পীর সঙ্গে তিনি অভিনয় করেন। উল্লেখ্য, সাংবাদিক মার্ক টালি তাঁর মেহেরপুরের বাড়িতে আতিথিয়তা গ্রহণ করেন। প্রসেনজিৎ বোস বাবুয়া স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের জল্লাদের দরবার’ খ্যাত নাটকে অভিনয় করেছেন। রাজনৈতিক জীবনে তিনি ন্যাপের মেহেরপুর জেলা সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পাশাপাশি একজন সাংগঠনিক ব্যক্তি হিসেবে হিন্দু-বৌদ্ধ ঐক্য পরিষদের জেলা শাখার শুরু থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত দীর্ঘদিন সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। প্রসেনজিৎ বোস বাবুয়া তার কর্মময় জীবনে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, অরিন্দম সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী, বাংলাদেশ টেলিভিশন শিল্পী পরিষদ সহ বিভিন্ন পুরস্কারে ভূষিত হন। [আতিক স্বপন, সাধারণ সম্পাদক, অরণি থিয়েটার]